নিউজ ডেস্ক: কুমিল্লা নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। দিন যত যাচ্ছে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গ্যাংয়ের সংখ্যা ও তৎপরতা। কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতায় সাধারণ বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন।
সম্প্রতি প্রকাশ্যে নগর উদ্যানের পাশে রতন গ্যাংয়ের হাতে ঈগল গ্যাংয়ের সদস্য শাহাদাত খুন হওয়ার পর নগরীতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের ১৭ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ-গ্যাং নির্মূলে পুলিশের তেমন তৎপরতা চোখে পড়ছে না। এতে নগরবাসীর মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীর কিশোর অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করছে ২০টি গ্যাং। এ ছাড়া নামে-বেনামে প্রতিদিনই গ্যাংয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ি-ঘর দোকান-পাট নির্মাণসহ যেকোনো কাজে এসব গ্যাংকে চাঁদা দিতে হয়। ইট-বালু-রড-সিমেন্ট সরবরাহের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি করা হয়। নগরীর প্রতিটি অলিগলিতে কিশোর গ্যাং আতঙ্ক বিরাজ করছে। এক গ্র“প অপর গ্রুপের সঙ্গে প্রকাশ্যে খুনোখুনিতে লিপ্ত হচ্ছে। হরহামেশা নিরীহ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা হচ্ছে এবং গায়ে পড়ে হয়রানি ও মারধর করা হচ্ছে। এ কারণে স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকরা শঙ্কায় রয়েছেন। নগরীর ধর্মসাগর পার্ক, নানুয়ার দীঘিরপাড়, রানীর দীঘিরপাড়, তালপুকুরপাড়, ফৌজদারি চৌমুহনী এলাকায় জনসমাগম কমে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ-হাঁটাচলার উন্মুক্ত স্থানগুলোতে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত অসহনীয় হয়ে উঠেছে। জামিনে মুক্ত হয়ে গ্যাংয়ের সদস্যরা আবার এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছে। এতে নির্যাতিত পরিবারগুলোর মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে গ্যাংয়ের সদস্যরা ‘বড় ভাইদের’ শেল্টারে থাকায় পুলিশের তৎপরতা তেমন চোখে পড়ে না।
দুই বছরে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে নগরীর মোগলটুলি এলাকার শিক্ষার্থী আজনাইন আদিল, মডার্ন স্কুলের ছাত্র মুমতাহিন হাসান মিরন, অটোরিকশা চালক শাহজাহান, নগরীর দিশাবন্দ এলাকার শিক্ষার্থী সাজ্জাতুল ইসলাম অনিক, অজিতগুহ কলেজের ছাত্র অন্তু, ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথমবর্ষের ছাত্র শাহজাদা ইসলাম খুন হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের মামলার আসামিরা জামিনে বেরিয়ে আবার অপতৎপরতা চালাচ্ছে। খুনের মামলার আসামি জামিনে বেরিয়ে আসায় মানুষ আরও বেশি ভয় পাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরীর বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ধর্মসাগর, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ, ফৌজদারি চত্বর, ভাষা চত্বর, তালপুকুরপাড়ে বখাটে ও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়েছে। এসব এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ সব স্থানে আমরা হাঁটাচলা করতে পারি না।
কুমিলা জেলা গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কায়েস আকন্দ বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় আমরাও উদ্বিগ্ন। কোনোভাবেই এ ধরনের গ্যাংকে আর বাড়তে দেওয়া হবে না। নতুন পুলিশ সুপারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। আশা করি শিগগিরই এ ধরনের গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য কমে আসবে। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি সহিদুর রহমান জানান, শাহাদাত হত্যার ঘটনায় রতন গ্যাংয়ের ১৭ সদস্যকে পুলিশ, ডিবি ও র্যাব গ্রেফতার করেছে। পর্যায়ক্রমে নগরীর গ্যাংগুলোকে শনাক্ত করে অভিযান চালানো হবে।
সূত্র: যুগান্তর