করোনার ভ্যাকসিনের ইতিবাচক ফল জানাল ফাইজার

25

নিউজ ডেস্ক: কোভিড-১৯ প্রতিরোধে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনের ইতিবাচক ফল পাওয়ার কথা জানালো মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান কোম্পানি বায়ো এন টেক। গতকাল বুধবার প্রতিষ্ঠানটি তাদের ভ্যাকসিনের ইতিবাচক ফল জানিয়ে দাবি করেছে, এটি স্বাস্থ্যবান মানুষের মধ্যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তবে এটি বেশি মাত্রায় দেওয়া হলে জ্বরসহ অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

ফাইজারের তৈরির ভ্যাকসিনের প্রথম ক্লিনিক্যাল তথ্য ‘মেডআরএক্সআইভি’ সাময়িকীতে গতকাল প্রকাশ করা হয়। তবে এটি এখনো কোনো পিয়ার-রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত হয়নি।

ফাইজারের পরীক্ষায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৪৫ জনতে ভ্যাকসিনের তিন ডোজ বা অন্য ওষুধ (প্লাসেবো) দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১২ জন ১০ মাইক্রোগ্রাম ডোজ, ১২ জন ৩০ মাইক্রোগ্রাম, ১২ জন ১০০ মাইক্রোগ্রাম ডোজ পান। ৯ জনকে প্লাসেবো দেওয়া হয়। যাঁরা ১০০ মাইক্রোগ্রাম ডোজ পেয়েছিলেন, তাঁদের অর্ধেকের ক্ষেত্রে জ্বর আসতে দেখা যায়। পরে দ্বিতীয় ডোজে তাদের মাত্রা কমানো হয়।

তিন সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ইনজেকশন পুশ করে দেখা গেছে, ১০ মাইক্রোগ্রাম ডোজ গ্রহণকারীদের ৮ দশমিক ৩ শতাংশ, ৩০ মাইক্রোগ্রাম ডোজ গ্রহণকারীদের ৭৫ শতাংশের জ্বর আসে। অনেকের ক্ষেত্রে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে দেখা দেয়। তবে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক কিছু নয়। এ জন্য কাউকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি বা কারও মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হয়নি।

তবে ফাইজার দাবি করেছে, ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে সুখবর হচ্ছে, এটি সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করেছে এবং এ অ্যান্টবডির মধ্যে কিছু নিউট্রিলাইজিং বা ভাইরাস নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম এমন অ্যান্টিবডি রয়েছে। কোভিড-১৯ রোগ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তির শরীরে যে নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তার চেয়ে ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৮ গুণ বেশি। তবে বেশি মাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি হলে তা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে সে বিষয়টি নিশ্চিত নয়। এটা প্রমাণে ফাইজারকে বড় আকারের পরীক্ষা করে দেখতে হবে, যাতে ৫০ শতাংশের কম মানুষ আক্রান্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এবারের গ্রীষ্মেই এ পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করেছে ফাইজার।
ফাইজার মোট চার ধরনের ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। এর মধ্যে বড় আকারের পরীক্ষার জন্য যেকোনো একটি সংস্করণ বেছে নেওয়া হবে।

ফাইজারের পরীক্ষায় দেখা গেছে, ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ মূলত বুস্টার শট, যা প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির জন্য দেওয়া হয়। যাঁরা একবার মাত্র ১০০ মাইক্রোগ্রাম ডোজ পেয়েছেন, তাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডির মাত্রা কম। তবে যাঁরা কম মাত্রার দুটি ডোজ পেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ১৪টি ভ্যাকসিন নিয়ে মানব পরীক্ষা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিলকেন ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠানের ১৪ টি ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা চলছে, এর মধ্যে রয়েছে ইনোভিও, ক্যানসিনো, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্নার মতো প্রতিষ্ঠান। আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান শিগগিরই পরীক্ষা শুরু করবে। এ তালিকায় রয়েছে মের্ক, জনসন অ্যান্ড জনসন ও সানোফি। এখন পর্যন্ত ১৭৮ টি ভ্যাকসিন উন্নয়ন পর্যায়ে রয়েছে।