স্থানীয়দের অনেকেই তাকে ‘সুপারম্যান’ বলছেন

19

নিউজ ডেস্ক: সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই চোখে পড়ে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের নানা সংকট ও অব্যবস্থাপনা খবর। এর মধ্যেও জীবন বাজি রেখে দৃঢ় মনোবল নিয়ে ফ্রন্টলাইনে থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন অনেক চিকিৎসক।

করোনাযুদ্ধে মানুষের সেবায় এমনই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ও উপজেলা করোনা ফোকাল পার্সন ডা. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন মিজান। করোনার এই মহামারিতে মানুষের জন্য নিরলসভাবে খেটে যাওয়া মানুষটাকে স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন তাদের ‘সুপারম্যান’।

সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা এক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিন্ন মাত্রায় আলোচিত হয়ে উঠেন এ চিকিৎসক।

ঘটনাটি ছিল, হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে রাস্তায় এক কিশোর তার নিথর বাবাকে কোলে নিয়ে রাস্তায় বসে আছে। কাঁদতে কাঁদতে সাহায্য চাইছে। তার বাবাকে বাঁচানোর জন্য আকুল আর্তনাদ করছে সে। আশেপাশে অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু কেউই সাহায্য করছে না। ডা. নিজাম দ্রুত গিয়ে রোগীর নাড়ি চেক করলেন। পালস নেই। রোগীকে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে সিপিআর দেওয়া শুরু করলেন তিনি। একটা সময় পরে গিয়ে পালস পেলেন। তখনও সিপিআর চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সারাদিনের ক্লান্তির পরে এই কষ্টকর কাজটা করার জন্য শক্তিটুকুও অবশিষ্ট নেই তার। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বিকেল থেকে পিপিই পরা, মুখে এন-৯৫ মাস্ক। ক্লান্তির সঙ্গে শ্বাস নিতেও অসুবিধা হচ্ছিলো তার। একটা সময় পরে গিয়ে আর পারেন না তিনি।

ছেলেটা পাশে থেকে দেখে বুঝে গেছে কীভাবে সিপিআর দিতে হয়। বাবাকে বাঁচানোর চেষ্টায় সিপিআর দিচ্ছিলো সে। কিছুতেই মরতে দেবে না বাবাকে। পাশে বসে রোগীর দিকে নজর রাখছিলেন ডা. নিজাম। হঠাৎ করেই রোগীর চোখ স্থির হয়ে গেলো। দেখেই দ্রুত পালস চেক করলেন। পালস নেই। তার চোখের সামনেই শেষ নিঃশ্বাস ছেড়ে রোগী চলে গেছে অন্য কোনো ভুবনে। বাচ্চা ছেলেটা তখনও সিপিআর দিয়ে চলেছে। ওর কাঁধে আলতো করে হাত রাখলেন তিনি। ডাক্তারের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো ছেলেটা, তারপরে বাবার মুখের দিকে। স্থির হয়ে গেলো তার হাত দুটো। অনভিজ্ঞ জীবনের সবচেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতাটা সয়ে গেলো সে নীরবে।

এমন ঘটনা একটি কিংবা দুটি নয়- আহরহ গল্প আছে এমন। ডা. নিজাম সর্বোচ্চ দিয়ে চান রোগেীদের সেবা দিতে।

কথা হয় ডা. নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, মার্চ মাসের ২৩ তারিখ থেকে উপজেলায় করোনা ফোকাল পার্সনের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই চেষ্টা করে আসছেন মানুষকে সচেতন করতে। কিন্তু কোনোভাবেই সচেতন করা যাচ্ছিলো না। মানুষ উপসর্গ নিয়ে ঘুরছে- গুরুতর আহত হয়ে কষ্ট করছে তবুও হাসপাতালে এসে নমুনা দিতে চাইছিলো না।

উপায়ন্তর না দেখে বাড়ি বাড়ি গিয়েই নমুনা সংগ্রহ করেছেন। হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন।