শিগগিরই একটি ভ্যাকসিন আসছে: অ্যান্টনি ফুসি

111

নিউজ ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে করোনাভাইরাসের রোগীদের ব্যাপারে গত মঙ্গলবার একটি সুখবর দেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা। তারা জানান, ডেক্সামেথাসন নামের সহজলভ্য ও স্বল্পমূল্যের একটি ওষুধ দিয়ে ভেন্টিলেশনে থাকা এক তৃতীয়াংশ রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে। আর অক্সিজেন সাপোর্টে থাকা রোগীদের এক পঞ্চমাংশের মৃত্যুর ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

এবার সুখবর দিলেন মার্কিন সরকারের কোভিড-১৯ বিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফুসি। তিনি বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন যে হারে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে, তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আর বৃহৎ পরিসরে লকডাউনের দরকার হবে না। কারণ শিগগিরই একটি ভ্যাকসিন আসছে। ইতোমধ্যে মানবদেহে প্রয়োগে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফুসি এমন মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, আমি আশাবাদী যে, বিশ্ব শিগগিরই একটি ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছে। এর ফলে মহামারির অবসান ঘটবে। উঠে যাবে লকডাউন। সম্ভব্য ভ্যাকসিনটির প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফল বেশ উৎসাহব্যঞ্জক বলেও জানান যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসের এ পরিচালক।

বর্তমানে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ও মৃত্যুর দিক থেকে বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে, ক্যালিফোর্নিয়া ও টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে এখন সংক্রমণ বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। এসব জায়গায় লকডাউনের প্রয়োজন আছে কি না- এমন প্রশ্নে ফুসি বলছেন, আমার মনে হয় না, লকডাউনে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আর কথা বলার দরকার আছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এ বিশেষজ্ঞ বলছেন, যেসব এলাকায় সংক্রমণের ঘটনা নেই, সেখানে স্কুল খুলে দিতে কোনো সমস্যা নেই। তবে যেসব অঞ্চলে সংক্রমণ এখনো চলছে, সেখানে অপেক্ষা করতে হবে। আবার কিছু অঞ্চলে বিকল্প উপায়ও অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন- প্রতিদিনের পরিবর্তে এক দিন পর এক দিন অথবা সকাল বা বিকেল শিফট করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা যেতে পারে। যাতে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সীমান্ত খোলার বিষয়ে বিষয়ে তিনি বলছেন, অবশ্যই এ ব্যাপারে আমাদের আগ্রহ রয়েছে। প্রতিদিনই বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা বলা যাচ্ছে না।

বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে একটি অংশ বলছেন, করোনাভাইরাসের সফল টিকা কখনোই আসবে না। এ ব্যাপারে তাদের যুক্তি হলো- এক দশকের বেশি সময় ধরে চেষ্টা করার পরও এইচআইভির কোনো টিকা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি।

এ প্রসঙ্গে ফুসির বক্তব্য হলো, এইচআইভির টিকার সঙ্গে করোনার টিকার তুলনা করা যাবে না। কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনের বিষয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী। কারণ এর (সম্ভাব্য যে টিকার কথা বলা হচ্ছে) মাধ্যমে কোভিড-১৯ আক্রান্ত অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়েছেন। তাদের মধ্যে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে তা ভাইরাসটিকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে এটা বলা যায় যে, বিশ্ব করোনাভাইরাসের একটি ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছে।

এ ছাড়া মর্ডানার তৈরি ভ্যাকসিন নিয়েও আশাবাদ প্রকাশ করেন মার্কিন এ গবেষক। ফুসি বলেন, মডার্নার তৈরি ভ্যাকসিন পশুর পর মানবদেহে গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলও উৎসাহব্যঞ্জক।

অন্যদিকে, সম্প্রতি ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের স্টেরয়েড ওষুধ ডেক্সামেথাসন নিয়ে পরিচালিত গবেষণার ফলাফল নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেন ফুসি।

মার্কিন সরকারের এ শীর্ষ গবেষক এমন সময় এসব কথা বলছেন, যখন দেশটিতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ২২ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি মানুষ।