ফেনীতে সংক্রমণ লাগামহীন, বেড়েছে উপসর্গে মৃত্যু

15

নিউজ ডেস্ক: ফেনীতে লাগামহীনভাবে বাড়ছে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯)-এর সংক্রমণ। সেসঙ্গে বেড়েছে উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা। গত এক সপ্তাহে মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ১০ জন। জোনভিত্তিক লকডাউনের কোনই ফল মিলছেনা এ জেলায়, জেলার ৭টি স্থানে লকডাউন চললেও আশঙ্কাজনক হারে সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের আগের দিনের রেকর্ড ভাগছে পরের দিন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৬ দিনে শনাক্ত হয়েছেন ২২৬ জন। এ ৬ দিনে মোট নমুনা পরীক্ষার করা হয়েছে ৭২৫টি। অর্থাৎ প্রায় ৩টি নমুনার  মধ্যে একজন পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। মোট শনাক্তের হার প্রায় ৩১ শতাংশ। জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪৫ জনে। আক্রান্ত হয়ে মোট ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত জেলায় মোট শনাক্তকৃত রোগীদের মধ্যে সদরে সর্বোচ্চ সংখ্যক শনাক্ত হয়েছেন ২৪১ জন। শনাক্তকৃত সংখ্যার ভিত্তিতে জেলায় দ্বিতীয় অবস্থানে দাগনভূঞা উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ১৩৪ জন শনাক্ত হয়েছে। এরপরে রয়েছে সোনাগাজীতে ১০৪ জন, ছাগলনাইয়ায় ৮৯ জন, পরশুরামে ৩১ জন ও ফুলগাজীতে ৩৪ জন। এছাড়া আরও ১২ জন রয়েছেন ফেনী জেলার বাইরের বাসিন্দা, ফেনীতে তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, বর্তমানে ১৮ জন করোনা রোগী ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। অন্যরা স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১৩ জনকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, এ পর্যন্ত সংগৃহীত মোট ৪ হাজার ৩৩৩টি নমুনার মধ্যে ৩ হাজার ২৫০টি নমুনার ফল পাওয়া গেছে। শুক্রবার (১৯ জুন) নতুন করে পরীক্ষার জন্য আরও ১৫৮টি নমুনা পাঠানো হয়েছে।
এদিকে জেলায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা। জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে ফেনীতে গত এক সপ্তাহে  ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজনের নমুনা পজিটিভ ছিল বলে মৃত্যুর পর জানা গেছে।

মৃতদের মধ্যে ৮ জন পুরুষ আর ২জন নারী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে মারা গেছেন ৬জন। আর বাকিরা নিজ বাড়িতে উপসর্গ নিয়ে মারা যান।

এদের মধ্যে ফেনী সদরের ৩ জন, দাগনভূঞার ২ জন, ফুলগাজীর ২ জন, ছাগলনাইয়ার ১ জন, সোনাগাজীতে ১ জন রয়েছেন। এর মধ্যে একজন রয়েছেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা, ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) দুপুরে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফুলগাজীর আমজাদহাট ইউনিয়নের এক ব্যক্তি (৫০) মারা গেছেন। জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত মঙ্গলবার তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইকবাল হোসেন ভূঞা। তিনি বলেন, ভর্তির দিনই তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল।

বুধবার (১৭ জুন) উপসর্গ নিয়ে দাগনভূঞায় ২ জন ও সোনাগাজীতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের তিনজনই পুরুষ। ওইদিন দুপুরে দাগনভূঞার পূর্ব চন্দ্রপুরে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তিনি ফেনীর বেসরকারি একটি ক্লিনিকে কর্মরত ছিলেন। মৃত্যুর ২ দিন আগে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার প্রাপ্ত ফলাফলে তার নমুনায় কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুবাইয়াত বিন করিম। একই দিন উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের সেকান্তরপুর গ্রামের এক ব্যক্তি (৫৫) মারা গেছেন। তিনি জানান, এ নিয়ে উপজেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার বিকালে জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে সোনাগাজীর মতিগঞ্জ ইউনিয়নের সুলাখালি গ্রামের খোন্দকার বাড়িতে ৮৪ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেই তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল বলেন জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উৎপল দাশ।

এর আগে মঙ্গলবার জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফেনী জেনারেল হাসপাতালে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ৩ জনের মৃত্যু ঘটে। এদের মধ্যে দুইজন নারী ও একজন পুরুষ। তিনজনই আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন বলে জানান আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া। মৃতদের মধ্যে দু’জন ছিলেন শহরের বিরিঞ্চি ও পূর্ব মধুপুরের বাসিন্দা। আরেকজন ছিলেন চৌদ্দগ্রামের একজন নারীর (২০)।

এর আগের দিন সোমবার (১৫ জুন) সন্ধ্যায় জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে এক নারীর (৭০) মৃত্যু ঘটে। তিনি শহরের শান্তিধারা আবাসিক এলাকায় থাকতেন।

অন্যদিকে রোববার (১৪ জুন) ছাগলনাইয়ার দক্ষিণ যশপুরে উপসর্গ নিয়ে ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ মারা যান। বুধবারপ্রাপ্ত ফলাফলে তার মৃত্যুর পরে সংগৃহীত নমুনা পজিটিভ এসেছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শিহাব উদ্দিন। তিনি জানান, এ পর্যন্ত উপসর্গ নিয়ে ছাগলনাইয়ায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২ জন।