নিউজ ডেস্ক: মহামারীকালে চতুর্মুখী চাপের মধ্যে ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তাতে সঙ্কট সামাল দিতে সরকারের পকেট কিছুটা চওড়া হবে, কিন্তু সেই অর্থের সংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছেই।
২০২০-২১ সালের জন্য তিনি দেশের আয়-ব্যয়ের যে ফর্দ হাজির করেন, তা কাটাছেঁড়া করে ‘অসম্ভব কল্পনাবিলাসই’ দেখতে পাচ্ছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
অবশ্য এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের আর কোনো অর্থমন্ত্রীকে বাজেট দিতে হয়নি। মানুষের জীবন আর জীবিকা- দুই কূলই রক্ষা করার কথা মাথায় রাখতে হয়েছে মুস্তফা কামালকে।
সেজন্য গতানুগতিক বাজেটের ধারা থেকে সরে এসে সরকারের অগ্রাধিকারের কাঠামো পরিবর্তন করার কথা অর্থমন্ত্রী নিজেই বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন।
স্বাভাবিকভাবেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় তাকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হয়েছে, লকডাউনে আয়হীন-কর্মহীন হয়ে পড়া কোটি মানুষের খাওয়ানোর জন্য রাখতে হয়েছে অর্থ। এভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেড়েছে ব্যয়ের বড় বড় অংক।
বিপরীতে আয়ের খাত ছিল সঙ্কুচিত। মহামারীতে সাধারণ মানুষের উপর প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে পারেননি তিনি। রপ্তানি নেমে এসেছে রেমিটেন্সেরও নিচে, সেখানেও কিছু আরোপ করা কঠিন ছিল। ব্যাংক খাতের নাজুক অবস্থার সঙ্গে পুঁজিবাজারেও আশা জাগানিয়া কিছু নেই।
এই অবস্থায় ক্ষতবিক্ষত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে বাড়তি অর্থ যোগাড়ের কথা ভাবতে গিয়ে বাজেট ঘাটতির ৫ শতাংশের বৃত্ত ভাঙার সাহস দেখাতে হয়েছে মুস্তফা কামালকে।
বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কত আয় হবে, সেটা নিয়ে খুব বেশি না ভেবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও জোগানকে ঠিক রাখতে জিডিপির ৬ শতাংশ, ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ধার-দেনার প্রস্তাব করেছেন তিনি।
অর্থমন্ত্রীর আশা, কর-রাজস্ব থেকে আয় হবে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এই দুই খাতের প্রাপ্তি থেকে আগামী অর্থবছরে তার ব্যয় পরিকল্পনা ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
বিশাল ঘাটতি পূরণে তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ৮০ হাজার ১৭ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা ঋণ করে তা মেটানো যাবে।
মহামারীর অনিশ্চিত যাত্রার মধ্যেও নতুন বাজেটে ৮ দশমিক ২ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জনের লক্ষ্য ধরেছেন মুস্তফা কামাল।
তার এই লক্ষ্যকে ‘হাস্যকর’ বলছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর এবং এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
রাজস্ব আদায়ের যে বিশাল লক্ষ্য ধরেছেন অর্থমন্ত্রী; তাও ‘অবাস্তব’ বলে মনে করছেন তারা।
কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে যে বড় অঙ্ক বরাদ্দ করা হয়েছে, তা কীভাবে ব্যয় হবে, তার দিক-নির্দেশনা না থাকার বিষয়টিও সামনে আসছে।
করোনাভাইরাস মহামারী গোটা দুনিয়ার চেনা-জানা অনেক কিছুই পাল্টে দিয়েছে। বাদ যায়নি বাংলাদেশে বাজেট উত্থাপন প্রক্রিয়াও। বাজেট পেশকে ঘিরে যে উৎসব, তার রঙও ফিকে হয়ে পড়েছিল ।
ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে স্বাস্থ্য বিধি কঠোরভাবে মেনে বসা সংসদে বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনার টানা তৃতীয় মেয়াদের সমরকারের দ্বিতীয় বাজেট নিয়ে হাজির হন মুস্তফা কামাল। যার শিরোনাম তিনি দিয়েছেন-‘অর্থনেতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’
মন্ত্রিসভায় বাজেট অনুমোদন থেকে শুরু করে সংসদ নেতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গী হয়ে সংসদে প্রবেশ, সবখানেই ছিল সামাজিক দূরত্ব। এমনকি অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিও ছিল অনেক কম, কেবল কোরাম পূরণ করার মত।