নিউজ ডেস্ক: করোনাভাইরাস বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক। দেশেও বেড়েই চলেছে এতে আক্রান্তের সংখ্যা, সেই সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও। অনেকে আশঙ্কা করছেন, সামনের দিনগুলোয় ইউরোপ-আমেরিকার মতোই হবে আমাদের অবস্থা। আসলেই কি তাই?
আমাদের চারপাশে মৃত্যুর গণনায় ধনী-গরিব প্রায় সমানসংখ্যক। যদিও সচ্ছল পরিবারগুলো লকডাউন অনেকটা সচেতনভাবেই পালন করছে; কিন্তু দরিদ্র জনগোষ্ঠী ততটা সচেতন নয় এবং ঘরবন্দি অবস্থাও ততটা ভালোভাবে পালন করছে না।
সে ক্ষেত্রে ঢাকা শহরের প্রত্যেক বস্তিবাসী সামাজিক দূরত্ব না মানায় তাদের মধ্যে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা চরম হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সেটা লক্ষ করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কি পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং শারীরিক পরিশ্রমই তাদের করোনার ব্যাপকতা থেকে রক্ষায় অধিক ভূমিকা রাখছে?
ধারণা করা হয়, সূর্যালোক থেকে পাওয়া ভিটামিন ডি এবং শারীরিক পরিশ্রম অনেক ক্ষেত্রেই মৃত্যুহার কমাতে ভূমিকা রাখছে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন কারণে প্রবীণ ব্যক্তিদের শরীরে ভিটামিন ডি-র পরিমাণ অনেক কমে যায়, যা তরুণদের বেশি থাকে।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ত্বক পাতলা হয়ে যায়, যার ফলে সূর্যের আলো তুলনামূলক কম পরিমাণে শোষিত হয়। এ কারণেই বয়োবৃদ্ধদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে আরও বেশি সূর্যের আলোয় অর্থাৎ রোদে থাকা উচিত। এ ছাড়া তাদের শারীরিক পরিশ্রমও অপর্যাপ্ত। গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়ামের সময় আমাদের শরীরে এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নিঃসৃত হয়, যার নাম Extracellular Superoxide Dismutase, যা Acute Respiratory Distress Syndrome (ARDS)-কে অনেকটাই প্রতিরোধ করে। এখানে বলে রাখা উচিত, ৮৫ শতাংশ আইসিইউতে ভর্তি করোনা রোগীর দেহে ARDS উপস্থিত থাকে।
গত কিছুদিনের মোট করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার গ্রাফে দেখা যায়, পৃথিবীব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও একই সঙ্গে কমছে মৃতের সংখ্যা, যার অর্থ মৃত্যুহার কমছে। বেশিরভাগ দেশেই গ্রীষ্মকাল, অর্থাৎ সূর্যের আলো বাড়ছে। সূর্যের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কমছে মৃত্যুহার।
নরওয়ে ও সুইডেন পাশাপাশি দেশ হওয়া সত্ত্বেও তাদের করোনায় মৃত্যুহারের পার্থক্য বেশ চোখে পড়ার মতো। সুইডেনে মৃত্যুহার যেখানে ১১.১৩ শতাংশ, নরওয়েতে তা ২.৭৯ শতাংশ। উল্লেখ্য, সুইডেন হল একমাত্র দেশ, যারা হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করার লক্ষ্যে দেশে কোনো লকডাউন জারি করেনি। কিন্তু একটা বিষয় খেয়াল করলে দেখা যায়, নিশীথ সূর্যের দেশ নরওয়েতে এখন দিনের প্রায় পুরোটা সময়েই সূর্যের আলো থাকে। সুইডেনেও আসছে গ্রীষ্ম, বাড়ছে সূর্যের আলো, কমছে মৃত্যুর হার।
সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেদের রোদে উন্মুক্ত করলে এবং যথেষ্ট কায়িক পরিশ্রম করলে আমরা হয়তো বা করোনার ভয়াবহতা থেকে অনেকটাই রক্ষা পেতে পারি। করোনাভাইরাস নামক অদৃশ্য শত্রু আমাদের যে কাউকে আক্রান্ত করতে পারে। তাই এর বিরুদ্ধে প্রকৃতি থেকেই আমাদের প্রতিরোধী ক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে।
ডা. ফারহানা ঈশিতা আহমদ : এমবিবিএস, এমপিএইচ (নিপসম)