নিউজ ডেস্ক: বলতে গেলে মহামারি করোনা কমবেশি বিশ্বের সব দেশেই হানা দিয়েছে। তবে কোনো কোনো দেশ নিজেদের বিচক্ষণতার জোরে এ মাহামারি থেকে বের হয়ে এসেছে। তাদের সাফল্য দেখিয়েছে পুরো বিশ্বকে। এমনই ৯ দেশের কথাই এখানে উল্লেখ করা হলো।
নিউজিল্যান্ড: করোনা মহামারিতে সাফল্য পেয়েছে দেশটি। নিউজিল্যান্ডে এখন কোনো কোভিড-১৯ রোগী নেই বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখের পর এ প্রথম দেশটি ‘করোনাশূন্য’ (জিরো অ্যাকটিভ কেইস) হলো। সোমবার (৮ জুন) সকালেই নিউজিল্যান্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সেদেশের শেষ কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগী এখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাই বর্তমানে আর কোনো করোনা রোগী নেই নিউজিল্যান্ডে।
আন্তর্জাতিক জরিপকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, নিউজিল্যান্ডে মোট ১ হাজার ৫০৪ জন করোনা রোগী পাওয়া যায়। এর মধ্যে ২২ জন মারা গেলেও বাকি ১৪৮২ জন সুস্থ হয়েছেন। দেশটি এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪৮ জনের করোনা পরীক্ষা করিয়েছে।
ফিজি : ওশিয়ানিয়ার এই আইল্যান্ডেও একসময় পরাধীন ছিল ব্রিটেনের কাছে। এই দেশে ফিজি হিন্দি ভাষার প্রচলন রয়েছে। প্রথম করোনা আক্রান্তর হদিশ মিলেছিল এ দেশে ১৯ মার্চ। তারপরই প্রধানমন্ত্রী ফ্রেঙ্ক বেইনিমারামা বন্ধ করে দেন বিমান পরিষেবা। বাইরে থেকে আগত সকলের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয় ১৫ দিনের কোয়ারেন্টাইন। ১৮ জন করোনা রোগীই সুস্থ হয়ে উঠেছেন এই দেশে। ২০ এপ্রিল নিজেদের করোনামুক্ত বলে ঘোষণা করেছে ফিজি।
পূর্ব তিমুর: এশিয়ার এ দেশের রাজধানী দিলি। এ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত পাওয়া যায় ২১ মার্চ। কিন্তু দেশের নয় এমন মানুষ যারা চীন ভ্রমণ করেছেন সম্প্রতি তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয় ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে। বন্ধ করা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জমায়েত। অন্য দেশ থেকে আসা সবার জন্য বাস্তবায়ন করা হয় ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন। অবশেষে ১৫ মে সুস্থ হয়ে ওঠেন দেশের ২৪তম শেষ করোনা রোগী। করোনামুক্ত হয় পূর্ব তিমুর।
মন্টিনিগ্রো : ইউরোপের বুকে বসনিয়া ও সার্বিয়ার সঙ্গে সীমানা ভাগ করে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মন্টিনিগ্রো। একেবারে যুদ্ধজয়ী রাজার মতো। ১৭ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্তের খবর মেলে বালকানস তীরের এ দেশ থেকে। তারপর লকডাউনের পথেই হাঁটে ৬ লাখ ২২ হাজার ৩৫৯ জনের দেশটি। ৩২৪ জনেই আটকে যায় করোনা আক্রান্তর সংখ্যা। ২৪ মে নিজেদের করোনামুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়।
ইরিত্রিয়া : আফ্রিকার একেবারে পূর্ব দিকে ৬০ লাখ জনগোষ্ঠীর দেশ ইরিত্রিয়া। ২১ মার্চ নরওয়ে ফেরত এক ব্যক্তির দেহে প্রথম ধরা পড়ে করোনাভাইরাস। করোনা যুদ্ধ শুরু করে ৯ জাতীয় ভাষার এ দেশ। করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন মাত্র ৩৯ জন। ১৫ মে করোনা মুক্তি লাভ করে তারা।
পাপুয়া নিউ গিনি : ওশিয়ানিয়ার এ দেশের জনসংখ্যা ৮০ লাখ ৯০ হাজার। মার্চ মাসের ২০ তারিখ প্রথম করোনা হানার হদিশ মেলে এ দেশে। তারপর জারি হয় রাত্রিকালীন কারফিউ। বন্ধ করে দেয়া হয় ইন্দোনেশিয়া সীমানা। এশিয়া থেকে যাত্রী আসা একেবারে নিষিদ্ধ করে দেয় এ দেশ। মাত্র ৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন দেশটিতে। গণপরিবহন ও জমায়েত বন্ধ করেই ৪ মে করোনামুক্ত হয়েছে এই দেশ।
সিসিলি : এক সময় ব্রিটেনের কাছে পরাধীন ছিল এ দেশ। ১৯৭৬ সালের ২৯ জুন স্বাধীন হয় সিসিলি। রাজধানীর নাম ভিক্টোরিয়া। ১৪ মার্চ প্রথম দুজনের দেহে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে এ দেশে। একটুও সময় নষ্ট করেনি এই দেশ। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করা হয় যুদ্ধজাহাজ। বন্ধ করা হয় চীন, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইরানের সঙ্গে সব যাতায়াত। ৯৭ হাজার ৯৬ জনের এ দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন মাত্র ১১ জন। সকলেই সুস্থ। করোনামুক্ত এই দেশ।
হলি সি : ‘রোমান কোর্ট’ দ্বারা পরিচালিত হয় এই দেশ। করোনা ধরা পড়ার পর এই দেশে সব ধরনের পর্যটন বন্ধ করা হয়। মাত্র ১২ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন এই দেশে। ৬ জুন নিজেদের করোনা মুক্ত বলে দাবি করে দেশটি।
সেইন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস : ক্যারিবিয়ান এ দেশের জনসংখ্যা ৫২ হাজার ৪৪১। এখানে প্রথম করোনা হানার খবর মেলে ২৪ মার্চ। তারপর বন্ধ করা হয় বিমানবন্দর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব দোকান। জারি করা হয় কারফিউ। ফল মিলেছে হাতনাতে। মাত্র ১৫ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনা থাবায়। ১৯ মে নিজেদের করোনা মুক্ত বলে ঘোষণা করেছে এই দেশ।