নিউজ ডেস্ক: ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে দু’দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে।
জেটিতে ভেড়ানো হচ্ছে জাহাজ। শুরু হয়েছে পণ্য ওঠানামা এবং ডেলিভারি। ঘূর্ণিঝড়ে বন্দরের অবকাঠামোগত তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও মেইন জেটিতে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা বন্দরের একমাত্র ড্রেজার এমভি খনক সরিয়ে নেয়ার সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়।
একটি লাইটার জাহাজের ধাক্কায় প্রায় ২০০ কোটি টাকা মূল্যের ড্রেজারটির তলা ফুটো হয়ে গেছে। সেই ফুটো দিয়ে পানি প্রবেশ করে ড্রেজারটি নিমজ্জিত হওয়ার উপক্রম হয়। তবে তার আগেই এটাকে টাগবোটের সাহায্যে টেনে ডায়মন্ড সিমেন্ট কারখানা সংলগ্ন উপকূলে বিচিং করা হয়। ২৮ বছর বয়সী খনক এর আগেও ২০০৯ সালে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়েছিল।
সে সময় বিদেশি একটি জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষে এটি ডুবে যায়। তখন ইঞ্জিনসহ এর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। পরে মেরামতের পর ড্রেজারটি দিয়ে আবারও পলি অপসারণ কাজ শুরু হয়।
তবে এটি তার স্বাভাবিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। দুর্ঘটনা এবং বয়সের কারণে ২ হাজার ৫০০ কিউবিক মিটার পলি অপসারণের ক্ষমতাসম্পন্ন খনকের কার্যক্ষমতা একপর্যায়ে নেমে আসে মাত্র ৫০০ কিউবিক মিটারে। সচল থাকলেও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় গত ৬ মাসে এটিকে ড্রেজিংয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়নি। বহির্নোঙর থেকে জেটি পর্যন্ত জাহাজ চলাচলের যে মূল চ্যানেলটি রয়েছে তার নাব্য ঠিক রাখতে খনক ব্যবহার করা হতো।
চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আরিফুর রহমান জানান, ড্রেজার খনকের তল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণের কাজ চলছে।
বন্দরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘খনক বন্দরের একমাত্র ড্রেজার। এর বয়স ২৮ বছর চলছে। এক্সেসরিজসহ জাহাজটি কিনতে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। নাজুক অবস্থায় থাকায় গত ৬ মাস এটা ব্যবহার করা হয়নি। বর্তমানে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে চ্যানেলের ড্রেজিং করা হচ্ছে। পুরান হয়ে যাওয়ায় খনকের বিকল্প ড্রেজার কেনার চিন্তাভাবনা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্দরের কোনো জাহাজ কিংবা অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ড্রেজার খনক দর্ঘটনায় পড়েছে ঝড়ের পরে।’
তিনি জানান, আবহাওয়া অফিস সতর্কতা সংকেত-৩ এ নামিয়ে আনলে বন্দর নিজস্ব অ্যালার্ট প্রত্যাহার করে নেয়। বহির্নোঙরে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেয়া পণ্যবোঝাই জাহাজগুলোকে আবার জেটিতে আনা শুরু হয়েছে।
জেটিতে পণ্য ওঠানামাও শুরু হয়ে গেছে। ইয়ার্ড থেকে পণ্য ডেলিভারিও চলছে। তবে বহির্নোঙরে অবস্থানরত জাহাজগুলো থেকে পণ্য খালাস শুরু হতে আরও ২-১ দিন সময় লাগতে পারে।
প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় মঙ্গলবার জেটির সব ক’টি জাহাজ বহির্নোঙরে সরিয়ে নেয়া হয়। বন্ধ হয়ে যায় পণ্য ওঠানামাও। বুধবার সকালে মহাবিপদ সংকেত জারি হলে পণ্য ডেলিভারিসহ বন্দরের সব ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ ঘোষণা করা হয়।