সর্বস্ব দান করে অস্ট্রেলিয়ান দম্পতি ঋণ নিয়ে দেশে ফেরৎ

209

মমিনুল ইসলাম মমিন: বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক আরফান উদ্দিন কোভিড-১৯ এ ক্ষতিগ্রস্থ্যদের সর্বস্ব বিলিয়ে ঋণ করে দেশে ফিরলেন। তার অর্জিত সর্বস্ব অর্থ দান করে গেলেন দেশে অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষে মাঝে।

জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক আরফান উদ্দিন স্বপরিবারে গত ৪ ফেব্রুয়ারী অস্ট্রেলিয়া হতে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার দরিরামপুরে তার গ্রামের বাড়ীতে আসেন। দেশে আসার কিছু দিন অতিবাহিত না হতেই শুরু হয় প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রাদুর্ভাব। এরই মাঝে সরকারি নির্দেশনায় অবরুদ্ধ করা হয় দেশের প্রতিটি অঞ্চল। কর্মহীন হয়ে পরে এ দেশের অধিকাংশ মানুষ। মানবিক দিক বিবেচনা করে অসহায় ও দুঃস্থ মানুষের পাশে দাড়াতে শুরু করেন নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক আরফান উদ্দিন ও তার স্ত্রী সাবিয়া এরফান। তার অর্জিত টাকার ১৩ লক্ষ টাকার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন ত্রিশাল, হালয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় কর্মহীন, অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে। এতে তার ব্যাংক হিসাব শূন্যে চলে আসে। যা এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক আরফান উদ্দিন।

আরফান উদ্দিন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক হওয়ায় অস্ট্রেলিয়া সরকারের ডাকে ও জীবিকার তাগিদে স্ত্রী সাবিয়া এরফান ও দুই শিশু সন্তান তিন বছর বয়সি আবিয়া আরফান ও দেড় বছর বয়সি আইবা আরফানকে রেখে আবার গত ২৭ এপ্রিল ফেরৎ চলে যেতে হয় অস্ট্রেলিয়ায়। তিনি চলে গেলেও থেমে থাকেনি তার মানবিক কর্মকান্ড অসহায়দের মাঝে ত্রান সহায়তা প্রদান কার্যক্রম। সহায়তা প্রদান কার্যক্রম চালিয়ে এদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ান তার স্ত্রী সাবিয়া এরফান। স্ত্রী সন্তান অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক হওয়ায় তাদেরও দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশনা দেন অস্ট্রেলিয়ান সরকার। তখন ব্যাংকে একাউন্ট শূন্য হওয়ায় বিমান ভাড়ার টাকা না থাকায় বিপাকে পরেন আরফান উদ্দিনের স্ত্রী সাবিয়া এরফান। কোন উপায়ান্ত না পেয়ে অস্ট্রেলিয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগীতায় ও বাংলাদেশে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের মাধ্যেমে অস্ট্রেলিয়ায় (৭ হাজার ২ শত ডলার) ঋণের আবেদন করেন। যা বাংলাদেশী টাকায় ৪ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা। আবেদনের প্রেক্ষিতে আরফান দম্পতি অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক হওয়ায় ঋণ প্রদান করেন দেশটির সরকার।

আরফান উদ্দিনের স্ত্রী সাবিয়া এরফান ও দুই সন্তান আইবা আরফান ও আবিয়া আরফানকে নিয়ে একটি বিশেষ বিমানে করে গত ৯ মে ফেরৎ চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। এ অবস্থায় গুনতে হয় বিমানের অতিরিক্ত ভাড়া। যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় ৫গুন বেশি। দুই বছরের নীচের শিশু হলে বিমানের ভাড়া নেওয়ার নিয়ম না থাকলেও বিশেষ বিমান হওয়ায় ৩টি টিকিটই খরিদ করতে হয় ৫গুণ বেশি টাকা দিয়ে। যার প্রতিটি টিকিটের মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করে।

আরফান উদ্দিনের স্ত্রী সাবিয়া এরফান ও দুই সন্তান আইবা আরফান ও আবিয়া আরফান অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর দেশটির সরকারি ব্যবস্থাপনায় রাখা হয় হোম কোয়ারেন্টাইনে। তাদের করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর কোন উপসর্গ না থাকলেও দেশটির নিয়ম অনুযায়ী থাকতে হচ্ছে এ ব্যবস্থাপনায়।

এ বিষয়ে ত্রিশাল, ধোবাউড়া ও হলুয়াঘাট উপজেলায় জানাযানি হলে প্রশংসায় ভাসছেন এ দম্পতি। তাদের এহান উধারতায় মুগ্ধ এসব উপজেলার সকল স্তরের লোকেরা। তাদের এ কর্মকান্ডকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন অনেক গুণিজন।

গত বছর অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টির অন্যতম গণনেতা টনিবার্কের সাথে আরফান ফ্যামেলী’স স্মাইলিং বেবি ফাউন্ডেশন কর্ণধার আরফান উদ্দিনের সৌজন্য সাক্ষাৎকালে ফাউন্ডেশনের কর্মকান্ড পর্যালোচনা করে প্রশংসা করেন এবং সেই সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ভূয়সী প্রশংসা করেন।

আরফান উদ্দিনের সাথে এ বিষয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বললে তিনি বলেন, শুধু নগর বা মফস্বল কেন্দ্রিক নয়, সীমিত সবটুকু সামর্থ দিয়ে আমরা চেষ্টা করছি প্রত্যন্ত ও দূর্গম এলাকাতেও জরুরী খাবার নিয়ে পৌছে দিতে। কিছু পাওয়ার আনন্দে এসব মানুষের নিখাদ ভালোবাসা সত্যি আবেগময়। ধন্যবাদ সাবিয়া এরফানকে, তাঁর ক্লান্তিহীন সাপোর্ট এর জন্য।

এছাড়াও উল্লেখ্য যে, পথশিশুদের সাহায্যার্থে আরফান উদ্দিন ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগে গড়ে তোলেন আরফান ফ্যামেলী’স স্মাইলিং বেবি ফাউন্ডেশন। যেখানে সমাজের অবহেলিত, এতিম ও ঠিকানা বিহীন পথশিশুদের পাশে দাঁড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। ময়মনসিংহ ত্রিশালে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড দরিরামপুর গ্রামের বালিপাড়া রোড সংলগ্নে অবস্থিত আরফান ফ্যামেলী’স স্মাইলিং বেবি ফাউন্ডেশন ২০১৫ সালে আরফান উদ্দিনের নিজস্ব অর্থায়নে এক বিগা জমির উপর ১১০ জন পথশিশু নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়ে অদ্যবধি অব্যহত রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় গত ১১ই মার্চ একটি সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিকআপ ভ্যানের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ মিনি রেস্টুরেন্ট (এসবিএফ ফুড ভ্যান) এর উদ্বোধন করেন প্রতিষ্ঠানটি। ভ্রাম্যমাণ মিনি রেস্টুরেন্টের লাভের শতভাগ অর্থই ব্যয় করা হয় সমাজের অবহেলিত, এতিম ও ঠিকানা বিহীন পথশিশুদের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে। পথশিশুরা যাতে উন্নত ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করতে পারে এ প্রতিষ্ঠানটি তাদের খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য যুগান দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।