হেপাটাইটিস ‘ই’ ভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে, পানি পানে সতর্কতার পরামর্শ

18

জাতীয় ডেস্ক: দেশে হেপাটাইটিস ই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জন্ডিসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই এ রোগ প্রতিরোধে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষকে পানি পানে সর্বোচ্চ সতর্ক হতে হবে।

শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে হেপাটোলজি সোসাইটি আয়োজিত এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মবিন খান। সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করেন বারডেম হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও হেপাটোলজি সোসাইটির বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ডা. গোলাম আজম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. সাইফুল ইসলাম এলিন ও ডা. মো. শাহিনুল আলম।

অধ্যাপক মবিন খানের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হেপাটাইটিস ই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, যা দেশে জন্ডিস হিসেবে পরিচিত। এছাড়া গত বছরের একই সময়ে চট্টগ্রাম মহানগরীতে হেপাটাইটিস ই ভাইরাসের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এবং কয়েকজনের প্রাণহানিও ঘটে।

গবেষণায় বলা হয়, বছরের এ সময় বৃষ্টির কারণে শহর এলাকায় পানি দূষিত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। আবার গরমের কারণে মানুষের যত্রতত্র অনিরাপদ পানি, শরবত গ্রহণের প্রবণতা বেড়ে যায়। আর এ বছর রমজান মাস গ্রীষ্ম মৌসুমে হওয়ায় এ শঙ্কা আরো বেড়ে যাচ্ছে। তবে জন্ডিসের প্রকোপ গ্রামের চেয়ে শহরাঞ্চলে বেশি।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশে জন্ডিসের মূল কারণ হেপাটাইটিস ই ভাইরাস। হেপাটাইটিস ই ভাইরাস পানিবাহিত জীবাণু। বৃষ্টির সময়ে শহরে সুয়ারেজ লাইন থেকে পানির লাইন দূষিত হয়।

গবেষণায় বলা হয়, ২০০৪ সালে বন্যার পর ঢাকা শহরে ব্যাপক আকারে একিউট ই ভাইরাল (হেপাটাইটিস) ছড়িয়ে পড়ে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহস্রাধিক ছাত্র আক্রান্ত হয় এবং এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিসের (জন্ডিসের) ক্ষেত্রে ৫০-৭০ শতাংশ দায়ী হেপাটাইটিস ই ভাইরাস। আর আক্রান্তদের তিন-চতুর্থাংশই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী (২০-৫৫ বছর)। এ ভাইরাসে একবার আক্রান্ত হলে ১৫-৪৫ দিন বিশ্রাম নিতে হয়। সাধারণভাবে মৃত্যুর হার এক ভাগের কম। তবে গর্ভবর্তী মায়েরা আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার ৮০ শতাংশ।

আতঙ্কিত না হয়ে হেপাটাইটিস ই ভাইরাস প্রতিরোধে নগরবাসীকে ছয়টি পরামর্শ দিয়েছে হেপাটোলজি সোসাইটি। সেগুলো হলো, বিশুদ্ধ পানি পান ও ব্যবহার নিশ্চিত করা (পানি ৩০ মিনিট ফুটিয়ে অথবা বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে), হোটেলে, ঘরে বাসি খাবার বর্জন, রাস্তার খোলা জায়গার শরবত ও খাবার বর্জন, খাওয়ার আগে ও মল ত্যাগের পরে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোয়া, বাসার পানির ট্যাংক চার মাস পরপর ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি দিয়ে পরিষ্কার করা এবং চোখ হলুদ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।